Saturday, April 14, 2012

বৈশাখের ইলিশ!!


[...মন্ত্রী তো পুরা আকাশ থেকে পড়লেন আমারে না জানাইয়া তেলের দাম কে বাড়াইলো? আরেক সাংবাদিকের প্রশ্ন স্যার আজ সকালে আপনিই তো ঘোষনা করলেন? সাহেব তো লেজেগোবরে অবস্থায় পরে গেলেন, সাংবাদিককে ধমক দিয়ে বললেন কিসের মধ্যে কি?... ]

 

বৈশাখ এলেই বাজারে প্রচুর ইলিশের চাহিদা থাকে, ওদিকে আবার পদ্মায় তো আর আগের মত ইলিশ নাই যার কারনে চাহিদা আর যোগানের তারতম্যের কারনে ইলিশের দাম তো বাড়েই ক্ষেত্র বিশেষে জাতীয় খবর হয়ে যায় (গতকাল টিভিতে দেখলাম ১৩টা ইলিশ ৳৭০,০০০)

যা হোক কালা মিয়ার (পেশায় বাস চালক) মেয়ে বায়না ধরছে সে ১লা বৈশাখ ইলিশ খাবে, ইলিশ মাছ সে যে খুব বিশেষ পছন্দকরে তাও না, কিন্তু টিভিতে পান্তা ইলিশ শুনতে শুনতে তার মনে হইছে এইটা না জানি কি জিনিস, এইটা যে তার সবচাইতে অপছন্দের কাটাওলা মাছটা এইটা তার একবারও মনে হয় নাই।

কালামিয়ার বড় আদরের কন্যা কি আর করা কালা মিয়ার ১লা বৈশাখের জন্য বেশি দামে মাছ কিনতেই হইলো।এই মাছ কিনার জন্য অবস্য সে বাস যাত্রীদের কাছ থেকে দেড়গুণ বেশি ভাড়া আদায় করছে। যাত্রীরা অবশ্য গাইগুই করছে কিন্ত সে শুনে নাই উল্টা বলছে গেলে যাবেন না গেলে নাই।

সব যাত্রীদের মত মফিজুল ইসলাম (চাউলের ব্যাবসায়ী) মারাত্তক ক্ষেপে গেলেন, মনে মনে ড্রাইভারকে একটা গালি দিয়ে আড়তে চলে আসলেন। মেজাজ টা তার তখনো গরম হইয়াই রইছে মনে মনে চিন্তা এই বাড়তি ভাড়ার টাকা সে প্রত্যেক চাওলের বস্তা থেকে তুলবে, এর মধ্যে আসলো এক কাষ্টমার।

কাষ্টমার কুদ্দুস তালুকদার (জ্বালানী মন্ত্রীর বাসার কেয়ারটেকার) মন্ত্রীর বাসার জন্য বাজার করতে আসছেন, বাজার করার জন্য তাকে প্রত্যেক সপ্তাহে একটা নির্দিষ্ট পরিমান টাকা দেয়া হয়, উনি আবার সেই টাকা থেকে ২ - ৩ হাজার টাকা চা পান খাবার খরচ হিসেবে কেটে রাখেন। এখন বেশি দামে চাউলের বস্তা কিনতে গিয়ে উনি দেখলেন উনার এ সপ্তাহে দুই এক কাপ চা কম খেতে হবে, তো উনি চাউলের বস্তা নিয়ে মন্ত্রীজির বেগমের কাছে গিয়ে বললেন চাউল কিনতে গিয়ে টাকা কম পড়ায় উনার পকেট থেকে হাজার পাঁচেক টাকা দিতে হয়েছে। কুদ্দুসের টাকায় চাউল খাইতে হবে এইটা বেগম সাহেবের খুব যে একটা ভালো লাগলো তাও না, ওনি রাতের বেলা সাহেবের আসার অপেক্ষা করতে লাগলেন।

সাহেবের মেজাজ বেশ কয়েকদিন ধইরা এমনি একটু গরম কারন পাশের দেশের দাদারা কথা দিয়া কথা রাখে নাই, সেইটা নিয়া অপজিশন দলরে ডলার (মার্কিন ডলার না) উপ্রে রাখছে। এর মধ্যে রাতের বেলা বেগম সাহেবা শুরু করলেন কি বালের (BAL-এর) মন্ত্রী হইলা, কুদ্দুইচ্চার কাছ থেকে টাকা করজা কইরা চাউল খাইতে হয়? এইটা শুইনা মন্ত্রীর মনে হইলো মাটি ফাটুক আমি ঢুকি। এ চিন্তা ও চিন্তায় সারা রাত তার খুব হলো না ।

বুড়া বয়সে মগজ আগের মত আর কাজ করে না তার উপর রাইতে ঘুম হয়নাই, মগজ পুরাই হ্যাং হইয়া রইছে। এই হ্যাং হওয়া মগজ নিয়া সকালে অফিসে গিয়াই কথানাই বার্তানাই বইলা বসলেন তেলের দাম সামনের সপ্তা থেকে বাড়বে। আর যায় কই টিভি পেপারে খবর ছড়াইতে সময় লাগলো না, পাম্প মালিকরা মন্ত্রীর ঘোষনার দুই ঘন্টা পরে থেকেই তেলের দাম বাড়াইয়া দিলো। সারা দেশের তোলপাড় শুরু হইয়া গেলো।

সারাদিন অফিসে বইসা ঝিমানোর পরে বিকালের দিকে কমেডি হিন্দি ছবি গোলমাল দেখার পরে মগজের হ্যাং কিছুটা কমলো, বাসায় বেগমরে ফোনদিয়া কইলেন সামনের সপ্তাহ থেকে বাজার খরচের টাকা বাড়াইয়া দিবো। অফিস থেকে দুইকাপ কড়া কফি খাইয়া আপার সাথে দেখা করতে ওনার বাসভবনের দিকে যাবেন ঠিক করলেন কিন্তু অফিস থেকে বাইর হইয়াই দেখে সাংবাদিকের বিরাট জটলা।

একটা নিস্পাপ কালো বিড়াল কালো বিড়াল ভাব নিয়ে আগাইতেই এক সাংবাদিকের প্রশ্ন স্যার হঠাৎ তেলের দাম বাড়ানোর কারন কি? মন্ত্রী তো পুরা আকাশ থেকে পড়লেন আমারে না জানাইয়া তেলের দাম কে বাড়াইলো? আরেক সাংবাদিকের প্রশ্ন স্যার আজ সকালে আপনিই তো ঘোষনা করলেন? সাহেব তো লেজেগোবরে অবস্থায় পরে গেলেন, সাংবাদিককে ধমক দিয়ে বললেন কিসের মধ্যে কি? আরেক সাংবাদিক প্রশ্ন করতে যাবার সাথে সাথেই সাহেব আবার ধমক দিয়ে বললেন "এই রাখ কথা বলতে দেও, ইউ ডোন্ট আন্ডাস্টান, ইউ ডোন্ট আন্ডাস্টান, লেখা পড়া করবে না খালি উল্টাপাল্টা প্রশ্ন" এই বলেই উনি সোজা গাড়ীর দিকে চলে গেলেন।

আপার বাসায় যাবার সাথে সাথেই দেখেন আপা গোমড়া মুখে বসে আছেন উনি পা ধরে সালাম করে আপার চেয়ারের পাশে রাখা টুলটাতে বসলেন। কোন কথা বললেন না।

১৫মিনিট পর আপা বললেন ইলেকশন কাছাইয়া আসছে তুমি এইগুলা কি শুরু করছো, মন্ত্রী পদ থেকে কি ইস্তফা দিবা নাকি? মন্ত্রী কিছুই বুজতে পারতেছেন না ঘটনা কি সাংবাদিকরা বললো তেলের দাম বাড়ছে এই দিকে আবার আপাও ক্ষেইপা রইছে। মন্ত্রীর অনেক দিনের পুরানো পি এস বুজলেন সাহেব ঢিলা মগজ, বাসার বাজার খরচ কথা বলতে গিয়া তেলের খরচ বাড়াইয়া দিছেন। উনি মন্ত্রীকে কানে কানে বললেন ঘটনা। ঘটনা বুঝতে পেরে লাফ দিয়া আপার পায়ে পইরা বললেন "আপা মিসটেক হয়া গেছে",

আপার নরম দিল, তিনি বুজলেন মিসটেক যখন হইয়াই গেছে এখন আর কি করা? ওই দিকে আবার আপার ছেলের বউর টেক্সাসে একটা বাড়ি পছন্দ হইছে, আপার ছেলে ভারতে বড় হইছে, এখন আম্রিকা থাকে, ঐখানের এক মেয়েরে তার মনে ধরছিলো তাকেই সে বিয়ে করে এখন আমেরিকার গর্বিত নাগরিক।আপার একমাত্র আদরের ছেলে আমেরিকা গিয়া কষ্ট করবে এটা আপা মানতে পারেন না, দেশ থেকেই উনি প্রত্যেক মাসে তার জন্য টাকা পাঠান, তার থাকার জন্য বাড়ি কিনে দিয়েছেন, আর যখন কাজের ব্যাস্ততা থাকে না বা ক্ষমতায় থাকেন না তখন ছেলের কাছেই গিয়ে থাকেন।

আপার অনেক চালু মগজ, আপা চিন্তা করলেন আমেরিকা ইরানকে খুব চাপে রাখছে আর ইরান এই চাপ সামলানোর জন্য খুব সস্তায় তেল বিক্রি করতেছে সব দেশের কাছে, মন্ত্রীকে বললেন তুমি তেলের দাম বাড়িয়ে দাও আর বলো যে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বেড়ে গেছে, ঐটা তো আর বটতলার হাঠ না কয়জনে আর ঐ বাজারের খবর রাখে, বাড়তি দামের কিছু টাকা তুমি তোমাদের ভাতিজাকে দিয়ে দিবা, কিছু তুমি রাখবা আর কিছু আমাকে দিবা সামনে অনেক খরচ আছে। মন্ত্রী বরাবরের মতোই অবাক হয় আর ভাবে এই না হলে আমাদের আপা!

বিঃ দ্রঃ দয়া করে কপি করিবেন না! আর যদি করিয়াই ফালান তাহা হইলে কষ্ট করিয়া হইলেও সুত্র লিংক সহযোগে উল্লেখ করিবেন।